আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: বেঁচে থাকার অবলম্বন একমাত্র সন্তান সাকিব আল হাসান সিফাত (১৩) কে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন স্বামী পরিত্যাক্ত সবুজা বেগম। সবুজা বেগম লালমনিরহাট জেলা আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের কাছারি বাজার এলাকার দিনমজুর শাহজাহান আলীর স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়ে। তার একমাত্র সন্তান সরকারী আদিতমারী জিএস মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৮ম শ্রেণির মেধাবি ছাত্র সাকিব আল হাসান সিফাত মরন ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
স্থানীয়রা জানান, কাছারি বাজার এলাকার দিনমজুর শাহজাহান আলীর মেয়ে সবুজা বেগমের বিয়ের তিন বছর পরেই তাকে তালাক প্রদান করেন স্বামী জামাল মিয়া। তালাকের পর একমাত্র সন্তান ৬ মাসের শিশু সাকিব আল হাসান সিফাতকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় গ্রহন করেন সবুজা বেগম। অন্ধের ষষ্ঠি খ্যাত একমাত্র সন্তান সাকিব আল হাসান সিফাতকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার সংগ্রমে প্রতিবেশিদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবন যাত্রা শুরু করেন। নিজে না খেয়েও ছেলেকে ভর্তি করেন স্কুলে। মেধাবী সাকিব আল হাসান সিফাত কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে সরকারী আদিতমারী জিএস মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৮ম শ্রেণিতে উত্তীর্ন হয়। মেধাবি হওয়ায় সহপাঠি বন্ধু বান্ধব আর শিক্ষকদের প্রিয় হয়ে উঠে সিফাত। ছেলের কৃতৃত্ব দেখে তাকে বড় কর্মকর্তা বানানোর স্বপ্ন বুনেন দিনমজুর মা সবুজা বেগম। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী হঠাৎ অসুস্থতাবোধ করলে ছেলে সিফাতকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান সবুজা বেগম। তারা তাকে চিকিৎসা না দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে যেতে পরামর্শ দেন। ছেলের চিকিৎসার জন্য বাড়িতে পালা মুরগিগুলো বিক্রি করে ছেলেকে নিয়ে যান রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (রমেক) মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ টুটুলের কাছে। চিকিৎসক পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তাকে রেফার করেন রমেকের হোমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম কামরুজ্জামানের কাছে। সেখানেও পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে সিফাতের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক। সিফাতকে বাঁচাতে দ্রুত এ পজেটিভ গ্রুপের তিন ব্যাগ রক্ত ও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। অন্ধের ষষ্ঠি ছেলে সিফাতের শরীরের মরন ব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে শুনে নির্বাক হয়ে পড়েন দিনমজুর মা সবুজা বেগম। অনেক কষ্টে রক্ত যোগার করলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়া হয়নি সিফাতকে। বাড়িতেই চলছে চিকিৎসা। ছেলেকে বাঁচাতে বাবার একমাত্র সম্পত্তি ৮ শতাংশ জমি বন্দক রেখে ৪০হাজার টাকায় পরীক্ষা নিরিক্ষা করান সবুজা বেগম। এখন প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার টাকার ওষুধ প্রয়োজন। সেটা যোগানো দুস্কর হয়ে পড়েছে। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে মেধাবি সিফাত।৷ অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনা ছেলের বাঁচার আর্তনাদ মায়ের চোখের ঘুম ও নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে পড়েছে। চোখের সামনে ছেলে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করলেও দিনমজুর মা সবুজা বেগম নিরুপায় হয়ে অর্থ যোগাতে ছুটছেন বিত্তবানদের দুয়ারে। মেধাবি ছাত্র সিফাতের মরন ব্যাধির খবরে তার সহপাঠি বন্ধু বান্ধব ও শিক্ষকরাও নির্বাক হয়ে পড়েন। সিফাতকে বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। যা যথেষ্ট ব্যায় বহুল। এ বিশাল খরচ বহন করা তার দিনমজুর মায়ের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব না। অন্ধের ষষ্ঠি সিফাতকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের দ্বাড়ে দ্বাড়ে ঘুরছেন দিনমজুর সবুজা বেগম। একই সাথে সহপাঠি আর প্রিয় ছাত্রকে বাঁচাতে শিক্ষকরাও তহবিল গঠন করে হাট বাজার ও বিত্তবানদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য নিচ্ছেন। তবুও যোগার হয়নি সিফাতকে বাঁচানোর ৮ লাখ টাকা। সিফাতের দিনমজুর মা সবুজা বেগম বলেন, নিজে এক বেলা খেয়ে ছেলেকে স্কুল পড়াচ্ছি বড় অফিসার বানাবো বলে। কিন্তু আমার সেই স্বপ্ন আজ মরন ব্যাধি ক্যান্সারে মরতে বসেছে। স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। এখন একমাত্র সম্বল সিফাত ছাড়া এ জীবন থেকে কি লাভ? সিফাতকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান তিনি। সিফাতের মা সবুজা বেগমের মোবাইল নং- ০১৭৮৭৪৫৩৫১৪।
সিফাতের স্কুল শিক্ষক লুৎফর রহমান লুকাস বলেন, সিফাত অত্যান্ত মেধাবি একজন ছাত্র। তাকে বাঁচাতে তার সহপাঠি ও বন্ধুরা তহবিল গঠন করে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য নিচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সে বেঁচে গেলে দেশ ও সমাজের জন্য ভাল কিছু নিয়ে আসতে পারবে। তাই মেধাবি সিফাতকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।